প্র্যাক্টিসিংমুসলিম

হোম
ক্যালেন্ডারইভেন্টসযোগাযোগ
+8801824262003
practicingmuslim@gmail.com
ফলো করুন :
1

কুরআন শিক্ষা করে তার উপর আমল করুন

যেহেতু কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং আমাদেরকে তা তিলাওয়াত করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তার উপর আমল করার জন্যই। সুতরাং কুরআন যাকে হালাল বলে তা হালাল, যাকে হারাম বলে তা হারাম বলে মেনে নিন। কুরআন যা করতে নিষেধ করে তা খবরদার করবেন না। যা করতে আদেশ করে তা অবশ্যই পালন করুন। কুরআনের স্পষ্ট-অস্পষ্ট সকল আয়াতের উপর যথার্থ ঈমান রাখুন। এই গ্রন্থে দেওয়া সমস্ত খবরকে সন্দেহহীন মনে বিশ্বাস করুন। দ্বিধাহীন চিত্তে এর ফায়সালা ঘাড় পেতে মেনে নিন। তবেই হবে যথাযথভাবে কুরআন তিলাওয়াত। আমল না করে কুরআন তিলাওয়াতের কি কোন লাভ থাকতে পারে? যার কাছে কুরআনী ইল্ম আছে (আলেম, ক্বারী) অথচ তার প্রতি অবহেলা করে রাত্রে নিদ্রায় বিভোর থাকে এবং দিনে তার উপর আমল করে না তাকে (এবং যে ফরয নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তাকে) বারযাখে (কবর-জগতে) চিৎ করে শায়িত করা হয়। তার শীর্ষদেশে দণ্ডায়মান একজন (ফিরিশ্তা) তার মস্তকে (ছোট) পাথর ছুঁড়ে মারেন। তাতে তার মস্তক বিদীর্ণ হয়ে যায় এবং ছুঁড়া পাথরটি পুনরায় কুড়িয়ে এনে পুনরায় ছুঁড়ে মারার পূর্বেই তার মস্তক অক্ষত অবস্থায় প্রত্যাবৃত্ত হয়। আর পুনঃ পুনঃ কিয়ামত অবধি এইভাবে তার আযাব হতে থাকে।[1]

2

কুরআন শিখা ও পড়ার সময় নিয়্যাত বিশুদ্ধ করুন

যেহেতু কুরআন তিলাওয়াত একটি ইবাদত। আর প্রত্যেক ইবাদত কবুল হয় দুটি শর্তে; ইখলাস ও তরীকায়ে মুহাম্মাদীর পথ অনুসরণ করে। সুতরাং কুরআন শিক্ষা ও পাঠের সময় আপনার মনে যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে। নচেৎ তা শির্কে পরিণত হতে পারে, আর তার পরিণতি অবশ্যই ভালো নয়। কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকেদের পূর্বে যে তিন ব্যক্তির প্রথম বিচার হবে, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইল্ম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে (পৃথিবীতে প্রদত্ত) তাঁর সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে, ‘আমি ইল্ম শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টিলাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইল্ম শিখেছ; যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর (দুনিয়াতে) তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর ফিরিশ্তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে। তাঁরা তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।[1]

3

কুরআন হিফয করুন এবং হিফয করার পর তা যেন ভুলে না যান

"কুরআন শিখার পর তা ভুলে যাবেন না। যে সূরা মুখস্থ আছে, তা যেন মুখস্থ থাকে সেই চেষ্টাই করবেন। মুখস্থ সূরা নামাযে পড়ুন, তাহলে অনুশীলনের ফলে তা মনে থাকবে। প্রত্যহ কিছু কিছু করে তিলাওয়াত করুন। নামাযের আযান হওয়া মাত্র মসজিদে এসে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ে বসে না থেকে নিয়মিত কুরআন পাঠ করুন। প্রতীক্ষার দীর্ঘ সময়কে কুরআন পাঠ করে কাজে লাগান। গাড়িতে ও বাড়িতে কুরআনের ক্যাসেট শুনুন। তা না করতে পারলে কুরআন মুখস্থ থাকবে না। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমরা নিয়মিত কুরআন পাঠ কর। নচেৎ সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! বাঁধা উট যেমন তার রশি থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে (বিস্মৃত হয়ে) যায়।’’[1] তিনি বলেন, ‘‘কুরআন-ওয়ালা হল বাঁধা উট-ওয়ালার মত। সে যদি তা বাঁধার পর তার যথারীতি দেখাশোনা করে, তাহলে বাঁধাই থাকবে। নচেৎ ঢিল দিলেই উট পালিয়ে যাবে।’’[2] তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর কিতাব শিক্ষা কর, (পাঠ করার মাধ্যমে) তার যত্ন কর, তা ঘরে রাখ এবং সুরেলা কণ্ঠে তা তিলাওয়াত কর। কারণ, উট যেমন রশির বন্ধন থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে (বিস্মৃত হয়ে) যায়।’’[3] সুতরাং বারবার যথা নিয়মে পুনরাবৃত্তি করলে তবেই কুরআন মনে থাকবে। নচেৎ অনায়াসেই তা মন থেকে মুছে যাবে। ফাল্লাহুল মুস্তাআন।"

"[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫০৩৩, মুসলিম [2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫০৩১, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৭৮৯ [3]. দারেমী, আহমাদ ৪/১৪৬, ১৫০, ১৫৩, ৩৯৭"

4

হৃদয় ব্যস্ত না থাকলে কুরআন তিলাওয়াত করুন

"অবসর সময়ে কুরআনে মন বসবে ভালো।অতএব রাতের তিলাওয়াত সবচেয়ে উত্তম। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا - إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلًا অর্থাৎ, নিশ্চয়ই রাত্রির জাগরণ (কুরআন) হৃদয়ঙ্গমের জন্য অধিক সহায়ক এবং সঠিক তিলাওয়াতের পক্ষে অধিক অনুকূল। অবশ্যই দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।[1] বিশেষ করে ফজরের সময় কুরআন তিলাওয়াত বড় ফযীলতপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন, أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا অর্থাৎ, সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত স্বলাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন (নামাযের সময় ফিরিশ্তা) উপস্থিত থাকে।[2]"

"[1]. সূরা মুযযাম্মিল-৭৩:৬-৭ [2]. সূরা ইসরা-১৭:৭৮"

5

আল্লাহর কালাম বুঝে পড়ুন

"টিয়া পাখীর মত কুরআন মুখস্থ বা দেখে পড়লে সওয়াব হতে পারে, তবে বিশেষ লাভ নেই। কারণ কুরআন বুঝা ও তা নিয়ে জ্ঞান-গবেষণা করা তথা তার উপর আমল করা ওয়াজেব। মহান আল্লাহ বলেন, أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا অর্থাৎ, তারা কুরআনের প্রতি মনঃসংযোগ করে না কেন? যদি ওটা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে হতো, তাহলে তারা ওতে বহু মতানৈক্য প্রাপ্ত হতো।[1] আসলে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে তা বুঝে তার দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করার জন্যই। মহান আল্লাহ বলেন, كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ অর্থাৎ, এ এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা স্বাদ ২৯ আয়াত) তিনি আরো বলেন, الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ অর্থাৎ, আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তা যথার্থরূপে তিলাওয়াত করে। তারাই এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। আর যারা তা অবিশ্বাস করে ফলতঃ তারাই হল ক্ষতিগ্রস্ত।[2] আর যথার্থরূপে (তিলাওয়াতের হক আদায় করে) তিলাওয়াত তখনই হবে, যখন তা শুদ্ধভাবে ও বুঝে পড়ে আমল করা হবে। তিনি নিজ বান্দার গুণ বর্ণনা করে বলেন, وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا অর্থাৎ, আর যারা তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে ওর প্রতি অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।[3] বলাই বাহুল্য যে, যারা না বুঝে কুরআন পড়ে এবং কুরআনের উপর আমল করে না, তারাই তার প্রতি অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে। সালাফে সালেহীনগণের অভ্যাস ছিল কুরআন বুঝে পড়ে তার নির্দেশ অনুযায়ী আমল করা। আবু আব্দুর রহমান সুলামী (রঃ) বলেন, ‘আমাদেরকে আমাদের ওস্তাদগণ বর্ণনা করেছেন যে, যাঁরা রসূল (ﷺ) এর ছাত্র ছিলেন তাঁরা দশটি আয়াত শিখলে ততক্ষণ পর্যন্ত আর আগে বাড়তেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ দশ আয়াতের বর্ণিত ইল্ম ও আমল শিক্ষা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা ইল্ম ও আমল উভয়ই (একই সময়ে) শিক্ষা করেছি।’[4] আল্লাহর কিতাব বুঝে পড়তে হয় বলেই তাড়াহুড়া করে তা খতম করা বিধেয় নয়। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘সে ব্যক্তি কুরআন বুঝে না, যে তিন দিনের কম সময়ে তা খতম করে।’’[5]"

"[1]. সূরা নিসা-৪:৮২ [2]. সূরা বাকারাহ-২:১২১ [3]. সূরা ফুরকান-২৫:৭৩ [4]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২২৯৭১ [5]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ প্রমুখ, সহীহুল জা’মে হা/৭৭৪৩"